গরুর কালা ভুনা রেসিপি: ঘরে তৈরি করুন চট্টগ্রামের বিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী স্বাদে ভরপুর কালা ভুনা

By Tayeba

Published on:

গরুর কালা ভুনা শুধুমাত্র একটি মাংসের পদ নয়—এটি বাংলাদেশের রন্ধনসংস্কৃতির একটি গর্বিত পরিচয়। বিশেষ করে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে এটি সমাদৃত, তবে সারা দেশেই এর জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। ঘন কালচে ঝোল, ঝাল ও মশলার ব্যালান্স, সঙ্গে বেরেস্তার ঘ্রাণ—এই পদটি যেকোনো উৎসব বা অতিথি আপ্যায়নে একেবারে অনবদ্য।

এই লেখায় আমরা বিস্তারিত জানবো কীভাবে বাড়িতে রেস্টুরেন্ট স্টাইলে গরুর কালা ভুনা তৈরি করা যায়। রেসিপির প্রতিটি ধাপ, উপকরণের গুণাগুণ, রান্নার কৌশল ও কিছু স্পেশাল টিপস থাকবে, যাতে আপনি পেয়ে যান সেই আসল কালা ভুনার স্বাদ, যা একবার খেলে মনে থেকে যায়।


গরুর কালা ভুনার বিশেষত্ব কী?

গরুর কালা ভুনার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—

  • ঘন ও কালো রঙের গ্রেভি, যা বেরেস্তা, মসলা ও ভালো করে কষানো থেকে আসে।
  • চর্বিযুক্ত ঝোল, যা তেল ভেসে থাকা অবস্থায় মাংসের সঙ্গে মিশে থাকে।
  • উচ্চমাত্রার ঝাল ও মশলা, যা চট্টগ্রামের স্বাদ ফুটিয়ে তোলে।
  • এটি সাধারণ ভুনা বা কোরমার মতো নয়, বরং ধীরে ধীরে কষিয়ে রান্না করা হয় যেন প্রতিটি উপাদান একে অন্যের সঙ্গে মিশে যায়।

উপকরণ (৪-৬ জনের জন্য)

প্রধান উপকরণ:

  • গরুর মাংস (হাড্ডিবিহীন বা অল্প হাড্ডি সহ) – ১ কেজি
  • পেঁয়াজ কুচি – ৪ কাপ (ভাজা ও কাঁচা দুইভাবে ব্যবহার করা হবে)
  • আদা বাটা – ২ টেবিল চামচ
  • রসুন বাটা – ২ টেবিল চামচ
  • শুকনা মরিচ গুঁড়া – ১ টেবিল চামচ (চাইলে আরও বেশি)
  • ধনে গুঁড়া – ২ চা চামচ
  • জিরা গুঁড়া – ১ চা চামচ
  • হলুদ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
  • গরম মসলা গুঁড়া – ১ চা চামচ
  • দারচিনি – ২-৩ টুকরো
  • এলাচ – ৩-৪টি
  • লবঙ্গ – ৩-৪টি
  • তেজপাতা – ২টি
  • দই (ফেটানো) – ১/২ কাপ
  • চিনি – ১ চা চামচ (ঐচ্ছিক, ব্যালান্স আনতে)
  • লবণ – স্বাদ অনুযায়ী
  • সরিষার তেল বা সাদা তেল – ১/২ কাপ (অথবা আরও বেশি প্রয়োজনে)

রান্নার ধাপসমূহ

ধাপ ১: মাংস ম্যারিনেট করা

  • প্রথমে মাংস ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
  • এরপর আদা, রসুন, দই, লবণ, ধনে গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, শুকনা মরিচ গুঁড়া, হলুদ দিয়ে মাখিয়ে ১ ঘণ্টা রেখে দিন।
  • চাইলে ম্যারিনেট করে ফ্রিজে ৩-৪ ঘণ্টাও রাখতে পারেন—এতে স্বাদ আরও গভীর হবে।

ধাপ ২: বেরেস্তা তৈরি

  • পেঁয়াজ কুচি তেলে দিয়ে হালকা বাদামি করে ভেজে তুলে নিন। বেশি ভাজা হলে কালা রঙ পেতে সাহায্য করবে।
  • একদম মচমচে করে ভাজবেন না—তাহলে পুড়ে যাবে এবং তিক্ত স্বাদ আসবে।

ধাপ ৩: মাংস রান্না শুরু

  • কড়াইয়ে তেল গরম করে দারচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, তেজপাতা দিয়ে হালকা ভাজুন।
  • ম্যারিনেট করা মাংস দিয়ে দিন এবং মিডিয়াম আঁচে নাড়তে থাকুন।
  • মাংস থেকে পানি ছাড়বে—সেই পানিতে রান্না চলুক যতক্ষণ না শুকিয়ে আসে।
  • এর মাঝে চিনি দিলে ঝালের সঙ্গে হালকা মিষ্টি ব্যালান্স আসবে।
  • কষাতে কষাতে যখন তেল ওপরে উঠতে শুরু করে, তখন বুঝবেন মসলা ঠিকমতো কষানো হয়েছে।

ধাপ ৪: বেরেস্তা ও গরম মসলা

  • রান্নার একদম শেষে বেরেস্তা ও গরম মসলা গুঁড়া দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
  • ঢেকে ৫-৭ মিনিট কম আঁচে রেখে দিন—এতে সব স্বাদ একসাথে মিশে যাবে।
  • যদি ঘন গ্রেভি চান, তবে পানি না দিয়ে শুধু তেল ও মসলা দিয়ে কষান।
  • কষানোর সময় ধৈর্য ধরে নাড়ুন, কারণ এই ধাপেই ‘কালা’ রঙ ও মূল স্বাদ তৈরি হয়।

পরিবেশন

  • সাদা ভাতের সঙ্গে গরম গরুর কালা ভুনা অনবদ্য।
  • পরোটা, লাচ্ছা পরোটা বা গরম নান রুটির সঙ্গে খেতে চাইলে হালকা পাতলা গ্রেভি রাখা যেতে পারে।
  • রান্না শেষে উপরে ঘি ছিটিয়ে দিলে স্বাদ দ্বিগুণ হয়ে যায়।
  • সঙ্গে লেবুর স্লাইস ও কাঁচা মরিচ পরিবেশন করলে খাওয়ার আনন্দ আরও বাড়ে।

কিছু অতিরিক্ত টিপস

  • সরিষার তেল ব্যবহার করলে স্বাদে আলাদা ধরণের ঘ্রাণ পাওয়া যায়, যা চট্টগ্রামের স্বাদ নিয়ে আসে।
  • বেরেস্তা বেশি হলে কালো রঙ ও ঘনত্ব বাড়ে, তবে অতিরিক্ত যেন না হয়—তাতে স্বাদ ভারী হয়ে যাবে।
  • কালা ভুনা আগে থেকে রান্না করে রাখতে পারেন। পরদিন খেলে স্বাদ আরও ঘন ও মসলা ঢুকে যায়।

উপসংহার

গরুর কালা ভুনা কেবল একটি পদ নয়, এটি বাংলাদেশের রন্ধন ঐতিহ্যের গর্ব। একটু সময়, ভালো মানের মসলা এবং ধৈর্য নিয়ে রান্না করলে এই মাংসের পদ ঘরেই রেস্টুরেন্ট-মানের স্বাদ দেবে।

আপনার পরিবারের জন্য তৈরি করুন এই গরম মশলাদার, ঝাঁজালো, ঘন গ্রেভিযুক্ত কালা ভুনা এবং প্রমাণ করুন—আপনার হাতেই আছে বাঙালি রান্নার আসল স্বাদ।

আজই ট্রাই করুন এই রেসিপি এবং উপভোগ করুন স্বাদ ও ঘ্রাণে ভরপুর এক ঐতিহ্যবাহী খাবার।

Leave a Comment